প্রেমের সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় ঢাবি ছাত্রীর আত্মহত্যা
ঈশ্বরদী প্রতিনিধিঃ প্রেমের সম্পর্ক মেনে না নেওয়ার গত সোমবার ২৬/১০/২০২০ দুপুরে পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার কন্দর্পপুর এক ভাড়াবাড়িতে আত্মহত্যা করেন ঢাবি ছাত্রি ফারিয়া তাবাসসুম রূম্পা।
প্রয়াত ফারিয়া তাবাসসুম রুম্পা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন, থাকতেন ঢাবির শামসুন্নাহার হলে।
পাবনার ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নের বাবুলচরা গ্রামের ফরিদ উদ্দিন মন্ডলের মেয়ে তিনি। পিতা ফরিদ উদ্দিন সরকারি চাকরিজীবী। নিহতের বড়ভাই সোনালী ব্যাংক লিমিটেড আটঘরিয়ায় শাখার সিনিয়র অফিসার, একারণেই স্ত্রী সহ আটঘরিয়া থানার দেবওরের কন্দর্পপুরে ভাড়া বাড়িতে অবস্থান করতেন তিনি। মৃত্যুর আগে তার ভাইয়ের সাথে ভাড়া বাসায় ছিলেন রূম্পা।
আটঘরিয়া থানার ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, রুম্পা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।পরিবারের লোকজন টের পেয়ে দ্রুত উদ্ধার করে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রুম্পার বাবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানায় এ ঘটনায় ইউডি মামলা করা হয়েছে উল্লেখ করে ওসি বলেন, আমরা ঘটনা স্থান পরিদর্শণ করেছি এবং মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে।
নিহতের ঘনিষ্ঠজনরা জানায়, পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে রাজি না হাওয়ার কারনে গত সোমবার দুপুরে তার ভাইয়ের ভাড়া বাড়িতেই জানালার গ্রিলে ওড়না বেধে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন রূম্পা।
রুম্পার বন্ধুরা জানায়,খুবই মার্জিত, ভদ্র, মেধাবী এবং প্রচণ্ড রকমের ধার্মিক ছিল সে। তার সাথে একটি ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। রুম্পার সাথে সে ছেলের সম্পর্ক তার পরিবার মেনে নেয়নি। এটা নিয়েই পরিবারে দ্বন্দ্ব চলছিল।হয়তো জোর করেই অন্যত্র বিয়ে দিতে চেয়েছিল তার পরিবার। আর সে কারণেই রুম্পা আত্মহত্যা করতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট থানায় কথা বলেছি। এ ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কখনোই কাম্য নয়।
দাফন কাজ শেষে পরিবারের কাছে ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে পরিবারের সকলের উপস্থিতিতে রুম্পার বাবা জানানঃ করোনাকালীন ছুটিতে গ্রামের বাড়ি বাবুলচাড়ায় অবস্থান করছিল আমাদের মেয়ে।চলতি মাসের সুরুর দিকে তার বিয়ের কথাবার্তা শুরু হলে রুম্পা অন্য কাউকে বিয়ে করবেন না বলে আমাদের জানায়। তার কথা শুনে আমরা অবাক হই।
তখন সে, ঢাকায় অবস্থিত বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র একই গ্রামের হাফিজুল ইসলামের ছেলে রাজু আহাম্মেদ এর সঙ্গে ওর প্রেমের সম্পর্কের কথা আমাদের জানায় এবং বলে তাকেই সে বিয়ে করতে চায়। রুম্পার কথামতো বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙেফেলায় প্রথমে সে গোপনে তার বড় ভাবীর ওষুধের পাতা থেকে একাধিক ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলে। এরপরে লুকিয়ে ব্লেড দিয়ে নিজ হাতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত সৃষ্টি করতে থাকে। তখন অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা আমাদের সকল পরিবার-পরিজনদের কে ডাকি এবং এ ঘটনা সম্পর্কে তাদের জানায়। তখন নিকটাত্মীয় এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কে নিয়ে ঘরোয়া বৈঠকে রুম্পাকে বলি নিজে একাগিয়ে ওই ছেলের সঙ্গে বিয়ে করে নিতে এবং এরপরে আমাদের সাথে আর কোন সম্পর্ক না রাখতে অথবা তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে। তখন আমার মেয়ে আমার পা ধরে সকলের সম্নে ক্ষমাচায় এবং আমাদের কথামত রাজুর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং এই ব্যাপারে রাজুকে জানিয়ে দেয়াহয়। এ প্রেক্ষিতে গত ১৯/১০/২০২০ইং আনুমানিক রাত ১০টার পরে রাজু আহমেদ তার কয়েকজন বন্ধু সহ বাড়ির সামনে আসে এবং রুম্পা কে সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকে। সে বলে আমাকে বাদ দিয়ে অন্যকারো সঙ্গে রুম্পার বিয়ে দিলে আমি আত্মহত্যা করবো। রুম্পা'কে বাইরে দিয়ে আসুন আমি ওকে সঙ্গে নিয়ে যাব। ও আমাকে ছাড়া বাঁচবে না আর ওকে অন্য কোথাও বিয়ে দিতে দেব না আমি। ওর চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আমার মেয়ে রূম্পা কান্নাকাটি শুরু করে এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এমন অবস্থায় আমরা রাজুর পরিবারকে জানালে তার অভিভাবক এসে তাকে নিয়ে যায়। এবং পরবর্তী দিন সকালে পরিবারের সকলের পরামর্শ মতে আমার মেয়েকে আমার ছেলের ভাড়া বাসায় রেখে আসি। ভেবেছিলাম কিছুদিন দূরে থাকলে হয়তো সবকিছু ভুলে যাবে। কিন্তু তা আর হলো না, আমার আদরের মেয়ে টা নিজেই নিজেকে শেষ করে দিল।
এ কথা বলার পরে তিনি পুনরায় কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তিনি আরো বলেন মৃত্যুই কি সকল সমস্যার সমাধান ছিলো? কোন মা বাবা তার সন্তানের খারাপ চায় না। এমন ভুল যেন আর কেউ না করে।
রুম্পার প্রতিবেশিদের সাথে কথা বলে তার বাবার বর্ণিত ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। তারা বলে, মেয়েটা আর দশ জনের মতো ছিলো না। খুব শান্ত এবং ভদ্র একটা মেয়ে। সে এভাবে নিজেকে শেষ করে দিবে এটা আমারাও ভাবতে পারিনি।
No comments