ঈশ্বরদীর অভিভাবকহীন গুরুত্বপূর্ণ তিনটি রোড চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় ঘটছে দূর্ঘটনাি

   

এডভোকেট  আব্দুল্লাহ্ মৈাভন ॥ ঈশ্বরদীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান রোড বলে পরিচিত ঈশ্বরদী কলেজ রোড,আইকে রোড ও রেলগেট থেকে তালতলা ইপিজেড রোডসহ তিনিটি রোড দীর্ঘদিন থেকে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। জনভোগান্তি সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলেও সমাধানের কোন উদ্যোগ আছে বলে মনে হয়না । অথচ এই রোড তিনটি দিয়ে রাশিয়ানসহ অন্যান্য দেশী-বিদেশী কর্মকর্তা-কর্মচারী,বিভিন্ন ব্যসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের বহনকারী প্যারাডো,প্রাইভেটকার বাস,মাইক্রো হাইয়েস,মালবাহী ট্রাক লড়ি,যাত্রীবাহী অসংখ্য বিভিন্ন প্রকার যানবাহন চলাচলের কারণে রোড তিনটি একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় রোডগুলির অসংখ্যস্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে এই রোড তিনটি দিয়ে চলাচলের কথা মনে হলেই ভুক্তভোগীদের হৃৎপিন্ড নাড়া দিয়ে ওঠে ।

এই প্রধান তিনটি সড়কে সৃষ্টি হওয়া বড় বড় গর্তের কারণে প্রায় প্রতিদিন ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা । ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ছোট-বড় যানবাহন, আহত হচ্ছে শত শত মানুষ । এ রোড তিনটি যেনো অভিভাবকহীন দেখার কেউ নেই । ভেঙে চুরে যাওয়া রোড গুলোর মধ্যে ঈশ্বরদী ইপিজেড রোড়, ঈশ্বরদী-কুষ্টিয়া রোড এবং চাঁদ আলীর মোড় থেকে সরকারী কলেজ হয়ে অরোনকোলা মোড় পর্যন্ত রোড । উত্তর বঙ্গের বৃহত্তম গরুর হাট অরোনখোলা হাটে দুর দুরান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতার আশা যাওয়া করে বড় বড় ট্রাকসহ বিভিন্ন ছোট বড় বৈধ-অবৈধ যানবাহন মালামাল বোঝাঁই করে বেপরোযা দিন রাত দাঁপিয়ে বেড়ানোর কারনে এবং মেরামতের কোন ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপুন্য হওয়ায় খুব দ্রুত এই রোড ভেঙে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গত এক বছরে এই সড়কে ২০ টির অধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে এতে এই সময়ের মধ্যে প্রাণহানী না হলেও নারী,পুরুষ মিলে আহত হয়েছে শতাধিক বিভিন্ন বয়সী মানুষ। বিকল্প রোড না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে। অন্যদিকে ঈশ্বরদী আলহাজ্ব সুতাকল মোড় থেকে কুষ্টিয়া রোডে রুপুপুর প্রকল্পের আবাসিক পর্যন্ত দিয়ার সাহাপুর নতুন হাট মোড় পর্যন্ত রোডের বিভিন্নস্থানে ভেঙে চুরে গর্ত হওয়ায় অসংখ্য ছোট বড় যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দূর্ঘটনায় কবলিত হয়ে। এই রোড দিয়ে যানবাহন চলাচলের ভিশন কষ্ট দায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রুপুপুর প্রকল্পের আবাসিক এলাকা গ্রীন সিটির হাজার হাজার রাশিয়ার নাগরিক,ঈশ্বরদীর বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার অসংখ্য মানুষ এই রোড দিয়ে যাতায়াত করে ভোগান্তির শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে।

ঈশ্বরদী বেপজার ঈশ্বরদী ইপিজেডস্থ বিভিন্ন কোম্পানি,পাকশী রেলবিভাগ ও পরমাণু প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারী, নারী,পুরুষ ও অসংখ্য যানবাহন এই রাস্তায় চলাচল করে । প্রতিদিন অতিরিক্ত বালু বোঝাই শতশত ট্রাক চলাচল করে রাস্তা ভেঙ্গে খানাখন্দে পরিণত হওয়ায় ইপিজেডের শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের যন্ত্রপাতি, আমদানী-রপ্তানী পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং শ্রমিক পরিবাহী যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পণ্যবাহী ট্রাক, রেলওয়ে কন্টেইনার ইয়ার্ডের নির্মাণ সামগ্রীর পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এসব কারণে ঈশ্বরদী ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে । বিনিয়োগকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ও শ্রমিকসহ সংশ্লীষ্টরা ভয়ানক অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন। পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প,পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় অফিস এবং ইপিজেডের দায়িত্বশীল সূত্রের দেওয়া তথ্য সূত্রে এসব জানা গেছে।

সূত্রমতে, সিভিলহাট তালতলা মোড় থেকে রুপপুর পাকার মোড় মহাসড়ক পর্যন্ত রাস্তাটি সওজের অন্তর্ভুক্ত। মাঝখানে ঈশ্বরদী ইপিজেড কর্তৃক নির্মিত বিদ্যমান ৭ দশমিক ৩১ মিটার প্রস্থ ও ২ দশমিক ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ বাইপাস রাস্তটি ইপিজেড কর্তৃক নির্মিত নিজস্ব রাস্তা। যে রাস্তটি দীর্ঘদিন থেকে বৈধ-অবেধ বালু ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত বালু বোঝাই ড্রাম ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহণ চলাচল করে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে।


কোনভাবেই প্রভাবশালীদের যানবাহন চলাচল বন্ধ করা সম্ভব না হওয়া এবং রাস্তার চতুর্দিকে সওজের রাস্তা থাকায় মেরামতের সমস্যা সৃষ্টি দূরীকরণে ও রাস্তটি বৈধ ব্যবহারকারীদের সুবিধা সৃষ্টিতে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে গত ২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি পাবনাস্থ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে গেজেটে অন্তর্ভুক্তকরার আবেদন করা হয়। রাস্তটি সওজের গ্রেজেটে একিভুত করা হলে একদিকে ইপিজেডের আশ পাশের সমস্ত রাস্তাসমূহ একীভূত হবে। ফলে রাস্তা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হবে।

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল জনপদের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্ননের লক্ষ্যে কৃষি খাতের পাশাপাশি শিল্পায়নের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে গত ১৩ জানুয়ারি ২০০১ তারিখে সরকার ঈশ্বরদীর পাকশীতে বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবহৃত ৩০৯ দশমিক ৯৭ একর জমিতে উপর ঈশ্বরদী ইপিজেডের উদ্বোধন করে।

ঈশ্বরদী ইপিজেডে বর্তমানে ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আরও ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। উৎপাদনরত শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহে ৬৬ জন বিদেশীসহ প্রায় ১৭হাজার জন শ্রমিক/কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন।

এছাড়া উৎপাদন শুরুর অপেক্ষায় থাকা শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের কার্যক্রম শুরু করলে কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ ও রপ্তানির পরিমান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। তাই ঈশ্বরদী ইপিজেডের বিনিয়োগ প্রবাহ অব্যহত রাখাসহ শিল্প-প্রতিষ্ঠানের আমদানী/রপ্তানী পণ্যবাহী যানবাহন ও রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও রেলওয়ে বিভাগীয় অফিসের কার্যক্রমসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে ঈশ্বরদী ইপিজেড কর্তৃক নির্মিত হার্ডিঞ্জ ব্রীজের নীচ দিয়ে ২ দশমিক ১২ কিলোমিটার বাইপাস রাস্তটি জরুরিভাবে সওজ অধিদপ্তরের গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করে যেনতেনভাবে মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও বাকিগুলি করা হয়নি । দেশপ্রেমী সচেতন মহলের পক্ষ থেকে জরুরিভাবে রোডগুলির মেরামত করার জোর দাবি করা হয়েছে।

নতুন হাট এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা সেন্টু সরদার,প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান, ব্যবসায়ী ফারুক,ব্যবসায়ী সামসুল আলম,বাচ্চু মন্ডল,আকুল শেখ,বিষ্টু সরকার ও অটো চালক আজম আলী অভিযোগ করে বলেন, ঈশ্বরদীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোড বলে পরিচিত আইকে রোড এবং রেলগেট থেকে তালতলা ইপিজেড রোড ও ঈশ্বরদী কলেজ রোড হয়ে অরোনকোলাসহ তিনিটি রোড দীর্ঘদিন থেকে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এসব রোডে প্রায় প্রতিদিনই দূর্ঘটনায় অনেককে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। এ অবস্থা জানার পরও কেউ মেরামতের উদ্যোগ নিচ্ছেনা। রোডগুলির অবস্থা দেখে মনে হয় কোন অভিভাবক নেই,কারও মাথা ব্যথা নেই। পাবনা সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী এম,মনসুর আলী জানান, বর্ষার পরই আগামী অক্টোবর মাসের শেষের দিকে রোডের মেরামত কাজ শুরু হবে। #





No comments

Powered by Blogger.