ঈশ্বরদীর পদ্মার বিস্তীর্ণ চরজুড়ে চলা ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইটে অস্ত্র ও মাদকসহ ২১ গ্রেফতার
স্টাফ রিপোর্টার,ঈশ্বরদী, ।। ঈশ্বরদীর পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ চরের ওপর দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ভয়, সন্ত্রাস,লুটপাট,বন্দুকযুদ্ধ ও অস্ত্রের মুখে ত্রাস সৃষ্টিকারী কাকন বাহিনীসহ অন্যান্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবশেষে সক্রিয় হয়ে উঠেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের পক্ষ থেকে শক্ত অভিয়ান শুরু হয়েছে। পুলিশের এই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’। ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’-এ পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএনসহ বিভিন্ন ইউনিটের মোট ১২’শ সদস্য অংশ নিয়েছেন। রবিবার ভোর চারটা থেকেই ঈশ্বরদী, পাবনার আমিনপুর, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নদীচরাঞ্চল এলাকায় এ অভিযানের শুরু পরিচালনা করা হয়। এই অভিযানে ২১ জনকে গ্রেফতারসহ ৫টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, অসংখ্য দেশীয় অস্ত্র, মাদক ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার সরকার ও ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ আ,স,ম, আব্দুর নূর জানান, অপারেশন ফার্স্ট লাইটে এখন পর্যন্ত চরের বিভিন্ন ঝোপঝাড় ও পরিত্যক্ত ঘাঁটি থেকে দুটি শুটারগান, চাইনিজ কুড়াল, বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এবং অভিযান এখনো চলমান রয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জ এর ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, এখন পর্যন্ত ৫টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, অসংখ্য দেশীয় অস্ত্র, মাদক ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। বাহিনীর ২১ জন সদস্যকে আটক করা হয়েছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ মতে,কাকন বাহিনী বিগত কয়েক বছর ধরে চরে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মুক্তিপণ আদায়, বালু লুট এবং কৃষকদের ফসল লুট করে আসছিল। অপকর্মের প্রতিবাদ করলে যেকোনো মুহূর্তে বন্দুক উঁচিয়ে গুলি চালানো ছিল তাদের স্বাভাবিক কাজ। সর্বশেষ গত ২৭ অক্টোবর পদ্মার চরে পাকা ধান কাটাকে কেন্দ্র করে কাকন বাহিনীর গুলিতে তিন কৃষক নিহত হন। এই হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ড জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে । এ কারণে প্রশাসন কঠোর হতে বাধ্য হয়েই প্রশাসনের এই অভিযানের উদ্যোগে শুরু হয় ।
‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’-এ অংশ গ্রহণকারী পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএনসহ বিভিন্ন ইউনিটের মোট ১২’শ সদস্যরা চরের বৈরী আবহাওয়া, ভৌগোলিক পরিবেশ, চরাঞ্চলের পথঘাট ও নদীর প্রবাহের অবস্থা সবকিছু মিলিয়ে অভিযানকে চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন তারা। অভিযান নিয়ে জনমনে স্বস্তির সাথে শঙ্কাও রয়েছে।
চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ, কৃষক ও জেলেরা এ অভিযানে স্বস্তি প্রকাশ করে বলছেন— “বছরের পর বছর আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয়। মাঠের ফসল তুলতেও ভয় লাগত। এই অভিযান যদি সম্পন্ন হলে আমাদের বেঁচে থাকার রাস্তা পরিস্কার হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে স্থানীয়রা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, অভিযান শেষে যেন পুনরায় কাকনসহ অন্যান্য বাহিনী মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠে। এজন্য তারা চান স্থায়ী নিরাপত্তা ও চর এলাকায় নিয়মিত টহল ব্যবস্থা।তারা এও বিশ্বাস করেন যে,পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী শক্ত অবস্থানে থাকলে তারা মাথা চারা দিতে পারবেনা।
চরাঞ্চলের মানুষ বহুল আলোচিত কাকন বাহিনীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের এই অভিযানকে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স এবং সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগের’ অংশ হিসেবে মনে করছেন।তারা বিশ্বাস করেন এই অভিযানের মাধ্যমে সন্ত্রাসের শেকড় উপড়ে ফেলানো সম্ভব হবে । সন্ত্রাসের শেকড় উপড়ে ফেলতে না পারলে আবারও পুরোনো অন্ধকার ফিরে আসার মাধ্যমে তথৈবচের সৃষ্টি হবে।#
ক্যাপশন \ অপারেশন ফার্স্ট লাইটে অংশ নেয়া আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের একাংশ।
তাং-০৯.১১.২০২৫

No comments